বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

হ্যাক হবে না জিমেইল অ্যাকাউন্ট

জিমেইলের পাসওয়ার্ড যদি সবাই জেনে যায়, তাহলেও কেউ চাইলেও আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এর জন্য প্রথমে জিমেইল লগইন করে ওপরে ডানপাশে আপনার ছবির আইকনে ক্লিক করে তারপর My Account-এ ক্লিক করুন বা সরাসরি  
my account  ঠিকানায় যান। তারপর Sign-in & security-তে ক্লিক করুন। নতুন পেজ এলে একটু নিচে ডানপাশে 2-step verification: off-এ ক্লিক করুন। তারপর Start Setup বাটনে ক্লিক করুন। পুনরায় আবার লগ-ইন করার পেজ এলে লগইন করুন। এখন Phone number: বক্সে আপনার মোবাইল নম্বর লিখে Send Code বাটনে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে। কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Verify-এ ক্লিক করুন। এখন Next-এ ক্লিক করুন। তারপর Confirm-এ ক্লিক করুন।
এখন থেকে প্রতিবার আপনার কম্পিউটার ছাড়া অন্য কোনো কম্পিউটার থেকে আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাইলে আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে এবং সেই কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Verify-এ ক্লিক করলেই আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে। আপনার ফোন নম্বর যদি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে যেকোনো সময় আপনার কম্পিউটার থেকে জিমেইলে লগইন করে ফোন নম্বর পরিবর্তন করতে পারবেন বা এই সুবিধা বাদ দিতে পারবেন। অনেক সময় মোবাইলে এসএমএসের সাহায্যে কোড আসতে দেরি হতে পারে। এ জন্য চাইলে Google Authenticator নামের একটি অ্যাপ নামিয়ে নিতে পারেন। এসএমএসে কোডের বাইরে এ অ্যাপে ৩০ সেকেন্ড পরপর একটি কোড আসবে। সেটি দিয়েও চাইলে Verify করতে পারবেন। তবে আপনি এসএমএস কোড না অ্যাপের মাধ্যমে আসা কোড ব্যবহার করবেন, তা শুরুতে নির্বাচন করে নিতে হবে। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস দুই সংস্করণেই পাওয়া যাবে।

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

Android রুট কি?কেন রুট করবেন?রুট করে লাভ কি?রুট সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নিন।

রুট কি? কেন রুট করবেন? ? রুট করলে সুবিধা ও অসুবিধা কি? আসুন আজ আমরা তা জেনে নেই।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায়ই শুনে থাকবেন এই শব্দটি। বিভিন্ন সাইটে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের ধারনা রয়েছে। তবে আজকে আমার প্রাথমিক ধারনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অনেক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরাই রুট কী এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না। অনেকে মনে করেন রুট করার মাধ্যমে ডিভাইসের পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স পাওয়া সম্ভব, আর তাই অনেকেই রুট করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। কিন্তু রুট করার পর দেখা যায় তাদের ডিভাইসের পারফরম্যান্স আগের মতোই রয়ে যায় বা আগের চেয়ে খারাপ হয়ে পরে। তারা হতাশ হয়ে পড়েন এ অবস্থা দেখে। কিন্তু তাদের মাঝে অজানাই থেকে যায় যে রুট করার আসল সার্থকতা কোথায়। আজকের আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের সামনে রুট করার কারন, কেন করবেন, রুট করার উপকারিতা এবং অপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করব। এবং আমার ধারনা আপনাদের মনে রুট কি বিষয়টি নিয়ে আর কোন সন্দেহ মুলক ধারনা থাকবে না।
রুট ব্যাপারটা আসলে কী?
রুট শব্দটি এসেছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম থেকে। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের রুট প্রিভিলেজ বা সুপারইউজার পারমিশন আছে তাদেরকে রুট ইউজার বলা হয়। সবচেয়ে সহজ শব্দে বলা যায়, রুট হচ্ছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক যদিও এর বাংলা অর্থ গাছের শিকড়। রুট হচ্ছে একটি পারমিশন বা অনুমতি। এই অনুমতি থাকলে ব্যবহারকারী তার নিজের ডিভাইসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রিভিলেজ ছাড়া সিস্টেম ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেননা, লিনাক্সেও তেমনি রুট পারমিশন প্রাপ্ত ইউজার ছাড়া সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজগুলো করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যার লিনাক্স-চালিত কম্পিউটার বা সার্ভারে সব কিছু করার অনুমতি রয়েছে, তাকেই আমরা রুট ইউজার বলে থাকি। অনেক সময় একে আমরা সুপার ইউজার বলেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে।
অ্যান্ড্রয়েড এবং লিনাক্স এর মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায় ?
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন আমি আন্ড্রয়েড নিয়ে কথা বলতে বলতে লিনাক্স এর কথা তুলে নিয়ে আসলাম। আসলে এন্ড্রয়েড তৈরি হয়েছে লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম মুল ভিত্তি থেকে।
লিনাক্স এ ইউজার পারমিশন আমরা খুব সহজে পেয়ে থাকি কিন্তু আমরা এন্ড্রয়েডে পারি না কেন ?
সাধারনত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম আমরা ইন্সটল করতে পারি তার তাই আমরা ইউজার পারমিশন কোড আমরা জেনে থাকি। কিন্তু আন্দ্রয়েড মোবাইল আমরা বাজার থেকে ক্রয় করে থাকি এবং তার অপারেটিং সিস্টেম সিস্টেম ইন্সটল ডিভাইস প্রস্তুতকারক করে থাকে। ডিভাইস প্রস্তুতকারক যখন মোবাইলের মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে তখন তাদের হাতে এই ইউজার পারমিশন কোড থেকে যায়। আর তাই আমাদের হাতে সেই ইউজার পারমিশন থাকে না। এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে কেন আমাদেরকে এই ইউজার পারমিশন কোড দেওয়া হয় না। আসলে ডিভাইস প্রস্তুতকারক মোবাইলের সুরক্ষা এবং নিরপ্ততার জন্য আমাদেরকে এই কোড দিয়ে থাকে না।
কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আমরা ইউজার পারমিশন কোড পাব না। আমরা ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে আমরা এই কোড সংগ্রহ করে এন্ডয়েড মোবাইলের ইউজার পারমিশন পেতে পারি। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে চাই সনি, HTC এর মত ব্রান্ড এর মোবাইল যখন ব্যবহার করি তখন আমরা তার ইউজার পারমিশন পাওয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে বুটলডার আনলক কোড সংগ্রহ করে থাকি। এই বুটলডার আনলক রুট পারমিশন পাওয়ার একটি অংশ।
আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এক হওয়া সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ভিন্ন রকম এর কারন কি ?
আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে যতগুলো মোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন লুক এর অপারেটিং হয়ে থাকে। অপারেটিং সিস্টেমের মূল ভিত্তিটা এক হলেও একেক কোম্পানি একেকভাবে একে সাজাতে বা কাস্টোমাইজ করতে পারেন। এই জন্যই সনির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইউজার ইন্টারফেসের সঙ্গে এইচটিসির একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইন্টারফেসের মধ্যে খুব কমই মিল পাওয়া যায়।
আন্ড্রয়েড মোবাইলে কেন রুট করা থাকে না ?
মোবাইল প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান যখন তাদের মোবাইল গুলো বাজারজাত করে তখন মোবাইল গুলোতে রুট পারমিশন দেওয়া হয় না। কারন হল রুট পারমিট করা থাকলে আপনি তখন আপনার মোবাইলে যে কোন কিছু করতে পারবেন। আপনি মোবাইলের রুট ফোল্ডাররে যেতে পারবেন (মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম ফোল্ডার)। আপনি যে কোন ফাইল ডিলিট, এডিট করতে পারবেন। আপনার মোবাইলে যখন রুট পারমিট করা থাকবে তখন আপনি কোন ফাইল ডিলিট বা সরিয়ে নিলে আপনাকে কোন ওয়ার্নিং দিবে না। আপনি হয়ত মনে করছেন এই ফাইল গুলো আপনার কোন প্রয়োজনে আসবে না আর তাই আপনি ফাইল গুলো ডিলিট করে দিয়েছেন। হয়তো আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করে ফোন ব্রিক করে ফেলেছেন। এতে কিছুক্ষণ পর দেখতে পারলেন যে আপনার মোবাইল আর চালু হচ্ছে না। আপনি তখন আপনার মোবাইল প্রস্তুত কারকে দোষারোপ করতে থাকবেন। যদি রুট না থাকতো তাহলে আপনি ফাইল গুলো ডিলিট এডিট তো দুরের কথা আপনি আই ফোল্ডারটি খুজে পেতেন না। ফোন প্রস্তুতকারক আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও এই সব পারমিশন তারা তাদের সুবিধার্থে দেয় না। এটা করা হয় আপনার ভালোর জন্যই।
কেন আপনি আপনার আন্ড্রয়েড ডিভাইসটি রুট করবেন?
আপনি তখনি রুট করার চিন্তা করবেন যখন আপনার মোবাইলে সব ধরনের সুযোগ ব্যবহার করতে পারছেন না, আপনার মোবাইল আপনাকে কোন সীমার মধ্যে বেধে রেখেছে। যারা একদমই নতুন এই বিষয় ভালভাবে কিছু জানেন না তারা তাদের মোবাইল রুট করার চিন্তা কিছুদিন পর করার সিদ্ধান্ত নিবেন। তার কারন আপনি আগে ভাল করে বুঝে নিন কেন আপনি রুট করবেন, এবং রুট করার পর আসলেই আপনার উপকার হবে কি না। অনেকে না বুঝে রুট করে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাই আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি সাবধানতার মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল রুট করুন।
আমরা আসলে অনেক কারনে আন্ড্রয়েড মোবাইল রুট করে থাকি। বর্তমানে কিছু কিছু অ্যাপ্লিকেশান এখন বের হয়েছে যা ব্যবহার করতে রুট পারমিটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ওভারক্লকিং করার মাধ্যমে মোবাইলের স্পীড বাড়ানোর জন্য রুট করে থাকেন। কেউ ডেভেলপারদের তৈরি ভিন্ন ভিন্ন সাধের কাস্টম রম ব্যবহার করার জন্য, কেউ গেম খেলার জন্য। আরও অনেক কারন আছে যেই কারনে রুট করা হয়ে থাকে। এই কারন গুলো থেকে থাকলে রুট করা আমি মনে করি ভাল। কিন্তু অকারন অবশত রুট করে বিপদে পড়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না।
রুট করার কিছু সুবিধা —
বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোবাইলের অব্যবহৃত ফাইল, টেমপোরারি ফাইল ইত্যাদি নিয়মিত মুছে ফোনের গতি ঠিক রাখা। এছাড়াও মোবাইলের পারফরমেন্স বাড়ানো যায় বলে আর অনেক ভাবে। ওভারক্লকিং করা সিপিইউ স্পিড স্বাভাবিক অবস্থায় যতটা থাকে তারচেয়ে বেশি দ্রুত কাজ করে। এর মাধ্যমে কোনো বিশেষ কাজে প্রসেসরের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তা করা যায়। যখন মোবাইল এমনিতেই পড়ে থাকে, তখন সিপিইউ যেন অযথা কাজ না করে যে জন্য এর কাজের ক্ষমতা কমিয়ে আনা যায় আন্ডারক্লকিং করে। এতে করে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করার সুবিধা রয়েছে। অনেক ডেভেলপার বিভিন্ন জনপ্রিয় মোবাইলের জন্য কাস্টম রম তৈরি করে থাকেন। এসব রম ইন্সটল করে আপনি আপনার মোবাইলকে সম্পূর্ণ নতুন একটি সেটের রূপ দিতে পারবেন। আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার রাম এর স্পীড বাড়াতে পারবেন, প্রসেসরের স্পীড বাড়াতে পারবেন তবে কোন হার্ডওয়্যার বা অন্যান্য কোন কিছু বাড়াতে পারবেন না। আপনি ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাকে ১৬ মেগাপিক্সেল করতে পারবেন না। যেই মোবাইলে NFC নেই তাতে তা সংযোগ করতে পারবেন না। রুট শুধু মাত্র আপনার অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্সে কাজে আসবে, বাহ্যিক কোন পরিবর্তন নয়।
রুট করার কিছু অসুবিধা রয়েছে —
সর্ব প্রথম মোবাইল রুট করার মাধ্যমে আপনার ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে। তাই রুট করার আগে সাবধান। অবশ্য অনেক মোবাইল আবার আনরুট করা যায়। আর মোবাইল আনরুট করা হলে তা সার্ভিস সেন্টারে থাকা টেকনিশিয়ানরা অনেক সময়ই ধরতে পারেন না যে সেটটি রুট করা হয়েছিল কি না। তবে কাস্টম রম থাকলে ধরা খাওয়া বাধ্যতামূলক। অনেকে মোবাইল ব্রিক নিয়ে অনেক কথাই বলেছে। এখন কথা হল ব্রিক মানে কি ? ব্রিক অর্থ ইট। আর ফোন ব্রিক মানে আপনার ডিভাইসকে ইটে রূপান্তরিত করা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আপনার মোবাইল কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। রুট করা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কাজের সময় যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে ফোনে স্থায়ী বা অস্থায়ী সমস্যা হতে পারে। প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফোনটি আনরুট অবস্থায় দেন যাতে আপনার মোবাইলের কোন ক্ষতি না হয়। রুট করার মাধ্যমে আপনি সেই নিশ্চয়তা ভেঙ্গে ফেলছেন। এখন এর সম্পূর্ণ দায়ভার আপনাকে গ্রহন করতে হবে। রুট করলে দেখা যায় অনেক সময় অনেক ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম রুট করা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু লক থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারী নিজেই রুট অ্যাক্সেস পান না, তাই অন্য প্রোগ্রামগুলোর রুট অ্যাক্সেস পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।
পরিশেষে যদি কিছু বলতে চাই তাহলে বলব যে কিছু করার আগে ভাল করে জেনে নেওয়া ভাল। রুট আপনি যদি ঠিক মত বুঝে নিতে পারেন তাহলে আপনার কাছে তা খুব এ সহজ আর যদি না পারেন তাহলে তা খুবই কঠিন …
আসা করছি আমার টিউন আপনাদের ভাল লাগবে। আপনাদের জন্য আর ভাল টিউন নিয়ে আবার হাজির হব আমি …

বিজ্ঞানী “এডিসন” ও তার জীবন

প্রিয় টিউনাররা, সবাইকে আবারও সালাম এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ আমার টিউনের বিষয় আবিষ্কারকদের গুরু এডিসনকে নিয়ে। আমি এর আগেও কিছু স্মরণীয় ব্যক্তিদের নিয়ে টিউন করেছি। আশা করি আপনারা সেসব টিউন থেকে নতুন কিছু শিখতে পেরেছিলেন। তাইতো আজ আমি আপনাদের জানাতে এলাম ইতিহাসের অন্যতম আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন সম্পর্কে। এ টিউনে আপনারা তার জিবন, আবিষ্কার ও তার জীবনের কিছু মজাদার ঘটনা। তো আর কথা না বাড়িয়ে আপনাদের দোয়া সাথে নিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

টমাস আলভা এডিসন ছিলেন একজন মার্কিন উদ্ভাবক এবং সফল ব্যবসায়ী। তার জন্ম ১৮৪৭ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি। তিনি গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং বাল্ব সহ বহু যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তার এসব উদ্ভাবন বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এবং এখনো সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন লক্ষ্য কোটি বার তার আবিষ্কৃত জিনিস ব্যবহার করা হয়।
এডিসন ইতিহাসের অতিপ্রজ বিজ্ঞানীদের অন্যতম একজন বলে বিবেচিত হন। তার নিজের নামে ১,০৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্যে, ফ্রান্স এবং জার্মানির পেটেন্ট রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতে তার বহু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার অবদানের জন্য তিনি সর্বস্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে তার আবিষ্কার গুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক টিকার, ভোট ধারনকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারী, বৈদ্যুতিক শক্তি, ধারনযোগ্য সংগীত এবং ছবি। তিনি তার জীবনের শুরুর দিকে একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। বাসস্থান, ব্যবসায়-বানিজ্য বা কারখানায় বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন ও বন্টনের ধারনা এবং প্রয়োগ দুটিই এডিসনের হাত ধরে শুরু হয় যা আধুনিক শিল্পায়নের একটি যুগান্তকারী উন্নতি। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন দ্বীপে তাঁর প্রথম বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে ১৯৩১ সালের ১৮ই অক্টোবর।

এডিসনের ছোটবেলা


একজন মহান ও চিরস্মরণীয় বিজ্ঞানী, যার বিখ্যাত আবিষ্কারগুলো মানুষের জীবনযাপনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। কিন্তু জানতে কি ইচ্ছা করে না, তার ছেলেবেলা সম্পর্কে? চলুন তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা জেনে নিই।
১৮ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও-র মিলান শহরে জন্ম নেন এডিসন। তার বাবার নাম স্যামুয়েল এডিসন ও মার নাম ন্যান্সি এডিসন। তাদের সবচেয়ে ছোট এবং সপ্তম সন্তান ছিলেন এডিসন। এডিসনের বাবা স্যামুয়েল ছিলেন কানাডা থেকে নির্বাসিত একজন রাজনৈতিক কর্মী। স্কুলশিক্ষিকা মায়ের প্রভাব অনেক বেশি ছিল এডিসনের প্রতি। অল্প বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছিলেন এডিসন। বড় হতে হতে একরকম বধির হয়ে যান তিনি। ছোটবেলায় এটার জন্য নানা সমস্যায় পড়লেও বড় হয়ে সবার কাছে আজগুবি সব গল্প বানিয়ে বলতেন। তার আজগুবি গল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো ট্রেন দুর্ঘটনায় কানে আঘাত পাওয়ার পর থেকে কানে কম শুনা।
১৮৫৪ সালে এডিসনের পরিবার চলে যায় মিশিগানের পোর্ট হুরনে। সেখানেই স্কুলে যোগ দেন এডিসন। কিন্তু তার স্কুল জীবন তিন মাসের বেশি ছিল না। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। স্কুলের গন্ডিবাঁধা পড়াশুনা তাঁর নিকট একঘেঁয়েমি মনে হত। পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ নেই, শিক্ষকদের অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হতেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। রেভেরেন্ড অ্যাঙ্গল নামের এক শিক্ষককে একদিন পেছন হতে 'বোকা' বলেছিলেন এডিসন। এতে ভীষণ ক্ষেপে যান তিনি। ফলস্বরূপ তিন মাসেই স্কুলজীবনের সমাপ্তি ঘটে এডিসনের। এর পর আর কোনদিন স্কুলে যাননি এডিসন। শিক্ষকদের এই বিরূপ আচরণ ছোট্ট এডিসনের মনে যেন খারাপ প্রভাব না ফেলে সেজন্য স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে এডিসনের মা। তারপর থেকে তার মা-ই তার শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করে গেছেন। তিনি বাসায় বসেই তাঁকে পড়ানো শুরু করেছিলেন।

মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বই পড়ে ফেলেন এডিসন। জ্ঞানচর্চায় তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পায় ব্যাপক ভাবে। ১২ বছর বয়সে এডিসন ভাবলেন তিনি যা শিখেছেন, সেগুলোকে কাজে লাগানো উচিত। বাবা-মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন বাড়ির কাছে গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রেইল রোড লাইনে পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ করার। হকার হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর এ্ক সময় এডিসন জানতে পেলেন একটি ছোট ছাপাখানা যন্ত্র কম দামে বিক্রি হবে। তিনি যে সামান্য অর্থ জমিয়েছিলেন তাই দিয়ে ছাপাখানার যন্ত্রপাতি কিনে ফেললেন। এডিসন নিজেই ‘গ্র্যান্ড ট্রাংক হেরাল্ড’ নামের ছোট একটি পত্রিকা বের করা শুরু করেন। একদম নতুন তরতাজা খবর থাকায় ট্রেনযাত্রীরা এডিসনের পত্রিকা পড়া শুরু করেন। একইসঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ করা, সম্পাদনা করা, ছাপানো, বিক্রি করা সহ সমস্ত কাজ করতেন। অল্পদিনেই তাঁর কাগজের বিক্রির সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। লাভ হল একশো ডলার।
নানা বিষয়ে আগ্রহ থাকার কারণে এডিসন নতুন কিছু পেলেই খুঁটিয়ে দেখতেন এডিসন। একদিন এডিসন লক্ষ করলেন, একটি ছেলে রেল লাইনের উপর খেলা করছে। দূরে একটি ওয়াগন এগিয়ে আসছে। ছেলেটির সেদিকে নজর নেই। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে হাতের কাগজ ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন লাইনের উপর। আর ছেলেটি কেউ নয়। স্টেশন মাস্টারের একমাত্র ছেলে। কৃতজ্ঞ স্টেশন মাস্টার যখন এডিসনকে পুরষ্কার দিতে চাইলেন, এডিসন সে সময় টেলিগ্রাফ শেখবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কারণ স্টেশন মাস্টার ছিলেন টেলিগ্রাফ অপারেটরও। স্টেশন মাস্টার রাজি হলেন মহানন্দে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই এডিসন টেলিগ্রাফি শেখা রপ্ত করে নিলেন। এর সঙ্গে সাংকেতিক লিপি ও তার অর্থ বুঝতে সক্ষম হলেন। ১৫ বছর বয়সে টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করা শুরু করেন এডিসন। পরের পাঁচ বছর আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যেই টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের প্রযুক্তি নিয়ে প্রচুর লেখাপড়া ও গবেষণা করেন তিনি।

যুবক এডিসন


১৮৬৬ সালে ১৯ বছর বয়সে কেন্টাকির লুইসভিলে চলে যান এডিসন। সেখানে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের হয়ে কাজ শুরু করেন। রাতের পালায় ডিউটি থাকায় সে সময় তিনি লেখাপড়া এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতেন। ১৮৬৮ সালে এডিসনের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের দেখতে বাড়িতে ফিরে যান এডিসন। বুঝতে পারেন এখন থেকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। বাড়ি থেকে এডিসন চলে যান বোস্টনে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কোম্পানির হয়ে কাজ শুরু করেন। সে সময় বোস্টন ছিল আমেরিকার বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। এডিসন এই সুযোগটাকে কাজে লাগান। কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরির কাজে হাত দেন। এভাবেই তৈরি করে ফেলেন ইলেকট্রনিক ভোটিং রেকর্ডার, যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা করা যেত। ধীরে ধীরে বোস্টনে এডিসনের পরিচিতি বাড়তে থাকে। তাঁর উদ্ভাবিত পণ্য মানুষ কিনতে শুরু করে এবং এডিসন আরো নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
তিনি ১৮৬৯ সালে বোস্টনে চাকরিরত অবস্থায় একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়। এই যন্ত্রের গুণাগুণ বিবেচনা করে উদ্ভাবক হিসেবে তাঁকে পেটেন্ট দেওয়া হল। আর এই পেটেন্ট এডিসনের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এরপর বোস্টন শহর ছেড়ে চলে এলেন নিউইয়র্কে। হাতে মোটেও পয়সা নেই। খাওয়া হয়নি দুদিন ধরে। এক টেলিগ্রাফ অপারেটরের সাথে পরিচয় ঘটল। সে এডিসনকে এক ডলার ধার দিয়ে গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানির ব্যাটারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানে দুদিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন তিনি খেয়াল করলেন ট্রান্সমিটারটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ম্যানেজারের অনুমতিক্রমে তিনি অল্পক্ষণের মধ্যেই ট্রান্সমিটারটি মেরামত করে ফেললেন। এর ফলে তিনি কারখানার ফোরম্যান হিসেবে চাকরি পেলেন। তাঁর মাইনে ছিল ৩০০ ডলার। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজের যোগ্যতা বলে ম্যানেজার পদে উন্নীত হলেন।
এডিসন ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী। একবার স্টাফোর্ড জংশনে রাত্রিবেলায় ট্রেন ছাড়ার সিগনাল দেওয়ার কাজ পেলেন। রাত জেগে কাজ করতে হত এবং দিনের বেলায় সামান্য কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়ে নিজের গবেষণার কাজ করতেন। এ সময় তিনি একটি ঘড়ি তৈরি করলেন যেটি আপনা থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে সিগনাল দিত। এর পরে বোস্টন শহরে কাজ করার সময় দেখতে পেলেন অফিস জুড়ে ভীষণ ইঁদুরের উৎপাত। তিনি হঠাৎ করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করলেন যা সহজেই ইঁদুর ধ্বংস করতে সক্ষম। তারপর তার জনপ্রিয়তা আর কে আটকায়। এই অর্থ দিয়ে তিনি নিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে গবেষণার কাজে লাগাতেন।

জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন

গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানি টেলিগ্রাফের জন্য এক ধরনের যন্ত্র তৈরি করত যার ফিতের উপর সংবাদ লেখা হত। এ সময় এডিসনের মনে হল বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে আরো উন্নত ধরনের যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এজন্যে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার। এ সময় চাকরিতে ইস্তফা দিলেন এডিসন। কয়েক মাস প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর উদ্ভাবন করলেন এক নতুন যন্ত্র। এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং সেই সঙ্গে এর উৎপাদন ব্যয়ও কম। তিনি এ যন্ত্রটি নিয়ে গেলেন গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানীর মালিকের নিকট। এতে মালিক খুশি হলেন। এডিসনকে জিজ্ঞাসা করলেন,
কত দামে সে যন্ত্রটি বিক্রি করবে?
এডিসন দ্বিধান্বিতভাবে বললেন,
যদি পাঁচ হাজার ডলার দাম বেশি হয়, আবার তিন হাজার ডলার খুব কম হয় তবে কোম্পানী স্থির করুক তারা কি দামে যন্ত্রটি কিনবে।
কোম্পানীর মালিক এডিসনকে চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে বললেন,
আশা করি আপনাকে আমরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছি।
এডিসন তো হতবাক! এই প্রচুর অর্থ বিজ্ঞানী এডিসনের জীবনে এক অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিল। এতদিন তিনি অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতেন। সেখানে তাঁর স্বাধীনতা ছিল না। এবার কয়েক মাসের চেষ্টায় নিউজার্সিতে তৈরি হল তাঁর কারখানা। তিনি সেখানে দিবারাত্রি কাজ করতেন। রাত্রে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতেন। এ কারখানাটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি গবেষণাগার। কয়েক বছরের মধ্যেই এডিসন প্রায় ১০০টির বেশি নতুন উদ্ভাবন করে তার পেটেন্ট নিলেন। এগুলি বিক্রি করে পেলেন প্রচুর অর্থ।
এডিসন এবার নিজের কারখানায় কাজ করতে করতে পুনরায় আকৃষ্ট হলেন টেলিগ্রাফির দিকে। অল্পদিনেই তৈরি হল ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ পদ্ধতি। এর সাহায্যে দুটি বার্তা একই সাথে একই তারের মধ্যে দিয়ে দুই দিকে পাঠানো সম্ভব। এরপরে একই সময়ে একই তারের মধ্যে দিয়ে একাধিক বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হলেন। আর এই পদ্ধতির সাহায্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার যে শুধু অসাধারণ উন্নতি হল তাই নয়, বরং খরচও কয়েকগুণ হ্রাস পেয়ে গেল।
তিনি ১৮৭৬ সালে তাঁর নতুন কারখানা স্থাপন করলেন মেনলো পার্কে। এখানে একদিকে তাঁর গবেষণাগার অন্যদিকে কারখানা। এই মেনলো পার্কে বিজ্ঞানী এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল আবিষ্কার করেছিলেন টেলিফোন, কিন্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা দেখা গিয়েছিল। এডিসন কয়েক মাসের চেষ্টায় তৈরি করলেন কার্বন ট্রান্সমিটার। আর এর সহায়তায় গ্রাহকদের প্রতিটি কথা স্পষ্ট এবং পরিষ্কারভাবে শোনা গেল। চতুর্দিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ল এডিসনের। এডিসন দীর্ঘদিন মানুষের শ্রবণ যন্ত্র নিয়েও কাজ করেছিলেন।

আলো জ্বালানোর পথে এডিসন

তিনি স্থির করলেন ইলেকট্রিক কারেন্টকে কাজে লাগিয়ে আলো জ্বালাবেন। সে সময় এক ধরনের বৈদ্যুতিক আলো ছিল কিন্তু তা ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। প্রথমেই তিনি এমন একটি ধাতুর সন্ধান করেছিলেন যার মধ্যে কারেন্ট প্রবাহিত করলে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। তিনি বিভিন্ন রকমের ধাতু নিয়ে ১৬০০ রকমের পরীক্ষা করলেন। অবশেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরি করলেন কার্বন ফিলামেন্ট। তিনি শুধু বাল্বের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হলেন। তিনি তৈরি করলেন নতুন এক ধরনের ডাইনামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরি করা প্রভৃতি। নিউইয়র্কে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে উঠল যার অগ্রনায়ক ছিলেন বিজ্ঞানী এডিসন।
এবার এডিসন তাঁর বিখ্যাত মেনলো পার্ক ছেড়ে ওয়েস্ট অরেঞ্জে চলে এলেন। ১৮৪৭ সালের ঘটনা। এসময় তিনি শব্দের গতির মতো কীভাবে ছবির গতি আনা যায় তাই নিয়ে শুরু করলেন ব্যাপক গবেষণা। মাত্র দু'বছরের মধ্যে উদ্ভাবন করলেন কিনেটোগ্রাফ, যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা। ১৯২২ সালে এডিসন আবিষ্কার করলেন কিনেটোফো যা সংযুক্ত করা হয় সিনেমার ক্যামেরার সাথে। এরই ফলে তৈরি হল সবাক চিত্র।

বিভিন্ন আবিস্কার

সে সময় নতুন আবিষ্কার হওয়া টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটা ত্রুটি ছিল। বহু দূরের দুই টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের মাঝখানে যে কেন্দ্রগুলি ছিল সেগুলি আর দিক থেকে পাঠানো খবর গ্রহণ করতে ও তাতে পরিবর্তন করতে পারত। ফলে গোপনীয়তা বলতে কিছু থাকত না। এডিসন এই ত্রুটিটি ঠিক করে দিয়েছিলেন। সে কালে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটি তার দিয়ে একটি খবরই পাঠানো যেত। এডিসন এক সঙ্গে অনেকগুলো খবর বিকৃতি ছাড়া পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত গবেষণা করতে করতে তিনি পাশাপাশি আরও কয়েকটি নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ রকমই একটি যন্ত্রের নাম ‘রেমিংটন টাইপরাইটার’।

কিছু দিন পর আবিষ্কার করেন ‘মিমিওগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র। এটি দিয়ে টাইপরাইটার বা হাতে লেখা চিঠি যত ইচ্ছা তত কপি করা যায়।

তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফনোগ্রাফ’ নামক যন্ত্রটি। একটি ডায়াফ্রেমের সামনে কথা বললে সেটি কাঁপতে থাকে। এই কাঁপুনি একটি সুইচ দ্বারা নীচে রাখা ঘুর্ণায়মান মোমের সিলিন্ডারে দাগ ফেলতে থাকে। পরে সিলিন্ডারটি আবার প্রথম থেকে ঘোরালে ডায়াফ্রেমে পূর্বে উচ্চারিত কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যায়। আধুনিক সিডি প্লেয়ারের এই প্রাথমিক ও সরল যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে এডিসনকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।

এডিসনের সব চেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার। আকাশের বিদ্যুতকে মানুষ তখন ব্যাটারিতে আটকাতে পেরেছিল। তার পরও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে তা থেকে আলো পাওয়া সম্ভব। এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্টায় সেই অলৌকিকতাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে অক্টোবর মাসে তিনি স্থানীয় পার্ক বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক যুগের সিনেমার আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে হাজার হাজার দর্শকের সামনে এডিসন তাঁর ‘কাইনেটোস্টোপ’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে চলমান ছবি দেখিয়েছিলেন। শিল্প জগতে জন্ম দিয়েছেন নতুন একটি যুগের। তিনি সিমেন্ট, আধুনিক সহজে বহনযোগ্য ব্যাটারি, রাবার ইত্যাদি আবিষ্কার করেছেন।
পেটেন্ট অফিস থেকে জানা যায় এডিসন তাঁর সারাজীবনে মোট ১৪০০ যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট নিয়েছেন। এ থেকেই তাঁর প্রতিভার বিস্তৃতির পরিমাপ আন্দাজ করা যায়। তিনি অনেক আবিস্কারের পথপ্রদর্শন করে গেছেন। নিজে চেষ্টা করে যদিও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তবুও পরবর্তীতে তাঁর ধারণাকে পুঁজি করেই এসব তৈরি করা হয়। নিচে সেরকম কতগুলো চেষ্টার কথাই তুলে ধরা হলোঃ

উল্কি যন্ত্র

১৮৭৬ সালে এডিসনের আবিষ্কৃত একটি যন্ত্রকে বলা যায় আধুনিক উল্কিযন্ত্রের পূর্বসূরি। অবশ্য তাঁর উদ্দেশ্য ছিল চিকন সুচ দিয়ে কাগজে ছাপার ব্যবস্থা করা। ১৮৯১ সালে স্যামুয়েল ও'রেলি প্রথম উল্কি আঁকার যন্ত্রের পেটেন্ট নেওয়ার পর এডিসনকে নকলের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। লোকের ধারণা ছিল যন্ত্রে আঁকা উল্কি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। তাই রেলির কাছে সবসময় উল্কিপ্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকত। ও'রেলির সঙ্গে এডিসনের সাক্ষাৎ হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। তবে এক বীমা কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছক্কার ঘুঁটির মত পাঁচ ফোটার একটি উল্কি ছিল তাঁর বাম কব্জিতে।

লোহা নিষ্কাশক

১৮৯০ সালের দিকে খনি থেকে নিষ্কাশন করা লোহার মূল্য ধাই ধাই করে বাড়ছিল। চুম্বক ব্যবহার করে অপদ্রব্য থেকে লোহা আলাদা করার কথা ভাবলেন এডিসন। ১৪৫টি খনিতে প্রবেশ করার অনুমতি নিলেন। প্রচুর পয়সা ঢাললেন একটা যন্ত্র তৈরির পেছনে। কিন্তু কিছু কৌশলগত গোলযোগে সব চেষ্টা বিফলে গেল। ততদিনে লোহার মূল্য পড়তির দিকে। বাধ্য হয়ে গবেষণা থামিয়ে দিলেন মাঝপথে। তবে তাঁর দেখানো পথ ধরে এখন বৈদ্যুতিক চুম্বক ব্যবহার করে ওই কাজ করা হচ্ছে।

বৈদ্যুতিক মিটার

বিদ্যুতের মিটার কোথায় নেই! আর ওটাও এসেছে এডিসনের মাথা থেকে। বিদ্যুতের যথেচ্ছ ব্যবহার ঠেকাতে এডিসনই প্রথম তৈরি করেন মিটার। এতে দুটি দস্তার পাত জিংক সালফেট দ্রবণে ডোবানো থাকত। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার অনুযায়ী এক পাতের দস্তা গলে অন্য পাতে জমা হতো। মাসের শেষে পাতটি ওজন করে বের করা হত ব্যবহারের পরিমাণ।

ফল সংরক্ষণ

বাতি আবিষ্কারের পথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন করেছিলেন এডিসন। বায়ুশূন্য টিউব নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে মাথায় আসলো ফলমূল সংরক্ষণের উপায়। তিনি বললেন,
'টিউবে পচনরোধী তরলে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি রেখে ভেতরের বায়ু টেনে বের করে নিতে হবে। তারপর টিউবের মুখ বন্ধ করে রেখে দেওয়া যাবে বহুদিন।'

ব্যাটারিচালিত গাড়ি

গাড়ির চাকা ঘোরাতে এডিসন ব্যাটারির শক্তি ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারিও বানিয়ে ছিলেন। তবে তিনি এমন এক ব্যাটারি বানাতে চেয়েছিলেন যা একবার চার্জ করলে একশ মাইল নির্বিঘ্নে চলতে পারে। কিন্তু ১০ বছর চেষ্টা শেষে রণে ভঙ্গ দিলেন, কেননা ততদিনে গ্যাসোলিন জ্বালানি সবার নাগালে আসতে শুরু করেছে। তাঁর পরিশ্রম একেবারে বৃথা যায়নি। সিগন্যাল বাতি বা খনিতে বহনযোগ্য আলো জ্বালাতে ওই ব্যাটারি কাজে লেগে গেল। একসময় এডিসনের ব্যাটারি সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাতেও পরিণত হয়।

কনক্রিট বাড়ি

আলো ঝলমলে জীবনের পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন কম দামে নিরাপদ ঘর। উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কনক্রিট, গড়ে তুললেন এডিসন সিমেন্ট কম্পানি। তাঁর ফর্মুলায় বাড়ি বানানোর প্রক্রিয়াটাও সহজ। কাঠ দিয়ে ফাঁপা কাঠামো গড়ে মাঝে ঢেলে দিতে হবে কনক্রিট। কয়েকদিন পরে জমাট বাঁধলে কাঠ সরিয়ে নিলেই হলো। পদ্ধতিটা খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। দক্ষ কারিগরের অভাব যেমন ছিল, তেমনি বাড়িগুলোও অতটা দৃষ্টিনন্দন হতো না। তবে এখন অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁর সেই কৌশলের আধুনিক সংস্করণ।


টেকসই আসবাব

কনক্রিটের ভূত ভালোভাবেই ঢুকেছিল এডিসনের মাথায়। তা না হলে আসবাব গড়তেও সবার আগে কনক্রিটের চিন্তা আসবে কেন? যুক্তি ছিল, ওজন একটু বেশি হলেও এ আসবাবের গ্যারান্টি আজীবনের। মাত্র দুই’শ ডলারে গ্রাহকের ঘর সাজিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯১১ সালে বাথটাব, পিয়ানো ও কেবিনেট তৈরি করে প্রদর্শনীর জন্য পাঠান নিউইয়র্কে। টেকসই আসবাবের শক্তি পরীক্ষায় বহনকারী কর্মীদের ওপর নির্দেশ ছিল, যেভাবে খুশি খামখেয়ালিপনায় আসবাব বহন করা যেতে পারে। কিন্তু প্রদর্শনীর দিন এডিসনকে কোথাও দেখা গেল না। কথিত আছে, জিনিসগুলো সে যাত্রায় টিকতে পারেনি।

কথা বলা পুতুল

গ্রামোফোনের পেটেন্ট নেওয়ার পর এর বহুমুখী ব্যবহারের চিন্তা করেছিলেন। এরপর বানালেন কথা বলা পুতুল। পুতুলের শরীরে বসানো হতো খুদে গ্রামোফোন, হাত-পা জোড়া হতো আলাদাভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট মেয়েদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কারখানায়। তাদের মর্জিমাফিক গান-কবিতা রেকর্ড করে সরবরাহ করতেন। রেকর্ডিং তখন সবে প্রাথমিক পর্যায়ে। পুতুলের ভেতরে গান বাজত কখনো প্রায় নিঃশব্দে, কখনো বিকট ঘড় ঘড় শব্দে। বাজখাই স্বরের পুতুলগুলো শিশুরা মোটেও ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।

জনপ্রিয়তা প্রাপ্তি

১৯২১ সালে তাঁর ৭৫ বছর পূর্ণ হয়। নিউইয়র্কের টাইমস পত্রিকা আমেরিকার মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি কে, তা যাচাইয়ের জন্য একটি সমীক্ষা করে। ফলাফল অনুসারে দেখা যায় সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি টমাস আলভা এডিসন। ফ্রান্সে তাঁকে দেওয়া হয় ‘কমান্ডার অব লিজিয়ন অনার’ উপাধি, ইতালিতে তাকে ‘কাউন্ট’ উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর নিজ দেশ আমেরিকায় তিনি দেশসেবার জন্য স্বর্ণপদক সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন বহু সম্মানজনক উপাধিতে। সরকার এডিসনের ছবি ও তাঁর আবিষ্কৃত প্রথম বৈদ্যুতিক বালবের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট বের করেছিল। তিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন অসংখ্য আবিষ্কার যা তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে।

চলুন, এডিসনের জীবনের কিছু স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিই

১০ বছর বয়সেই প্রথম গবেষণাগার

ছোটবেলা থেকেই এডিসন আসেপাশের জগৎ নিয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন। ৯ বছর বয়স থেকেই তিনি বাড়িতে ছোটখাটো পরীক্ষা শুরু করেন। বাসা থেকে তাঁকে যে টাকা দেওয়া হতো তার সবই খরচ করতেন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ কেনায়। এই অমূল্য রাসায়নিক পদার্থগুলো নিয়ে সবসময় সচেতন থাকতেন তিনি। এগুলোকে ‘বিষ’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখতেন, যেন মানুষ এগুলো থেকে দূরে থাকে। মাত্র ১০ বছর বয়সেই টমাস তাঁর বাড়ির নিচে নিজের একটি পরীক্ষাগার তৈরী করে ফেলেছিলেন।

সমস্যা, না আশীর্বাদ?

এডিসন কানে কিছুটা কম শুনতেন। কেউ কেউ বলতেন এক কন্ডাক্টর তাঁকে একবার কষে চড় মেরেছিলো বলে এই অবস্থা। আবার কেউ বলেন, এটি জিনগত সমস্যা; কেননা এডিসনের বাবারও একই সমস্যা ছিল। তবে সমস্যাটির কারন যাই হোক না কেন, এর ফলে কিন্তু এডিসন গভীর মনযোগ দিয়ে কাজ করতে পারতেন। বাইরের শব্দ কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারতো না। এডিসন ছিলেন কাজপাগল মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের মত কাজ করতে পছন্দ করতেন তিনি। ফলে এই সমস্যাটি তাঁর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

প্রথম চাকরি হারানোর কারণ

১৪ বছর বয়সে ওয়েসটার্ন ইউনিয়েনর টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন আলভা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধার্থে দিনের শিফট পরিবর্তন করে ডিউটি নেন রাতে। কিন্তু একবার ব্যটারিতে সালফারিক এসিড দিয়ে পরীক্ষা করার সময় দুর্ভাগ্যবশত অফিসে আগুন লেগে যায়। ফলে চাকরি ছাড়তে হয় তাঁকে।

প্রথম আবিষ্কারে ব্যর্থতা প্রাপ্তি

২২ বছর বয়সে ভোট রেকর্ডিং মেশিন এর জন্য টমাস তাঁর প্রথম স্বত্ত্বাধিকারটি পান। এটি তিনি তৈরী করেছিলেন প্রশাসনের জন্য। এতে আইনসভার প্রত্যেক সদস্যের একবার করে সুইচ টিপে প্রদত্ত কাগজে ভোট সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা এটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। সদস্যরা বারবার ভোট পরিবর্তন করায় মেশিনটি তাদের ভোট সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে পরিচালনা পর্ষদের প্রধান মেশিনটি বাতিল করেন। এতে করে টমাসের স্বত্ত্বাধিকারও বাতিল হয়ে যায়।

গোপন সাংকেতিক ভাষা

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর দু’বছর পর এডিসনের পরিচয় হয় মিনা মিলার সাথে। তাঁদের দু’জনই প্রথম দেখায় একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। এক সাথে সময় কাটাতে থাকেন দু’জন। এমনকি মিনাকে আলভা শিখিয়ে দেন মোর্স নামের গোপন সাংকেতিক ভাষাটিও। অনেক মানুষের মধ্যে থাকলে তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতেন। এরপর একদিন আলভা মিনাকে প্রস্তাব জানালেন . – — ..- .-.. -.. -.– — ..- — .- .-. .-. -.– — . এবং মিনা উত্তর দিলেন -.– .। এর পরপরই তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যাপারটা মজাদার না?

রহস্যময় ট্যাটু

মিউচুয়াল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন অনুসারে আলভার বাম বাহুতে পাঁচটি ফোটা বিশিষ্ট একটি ট্যাটু ছিল। এই রহস্যময় ট্যাটু সম্পর্কে কেউ জানতো না। প্রথম যে ট্যাটু মেশিনটি আলভা আবিষ্কার করেন, সেটি স্টেনসিল কলমের সাহায্যে কাজ করতো। ১৮৭৬ সালে তিনি এর স্বত্বাধিকার পান। পরবর্তীতে স্যামুয়েল রেইলি এই ট্যাটু মেশিনটিকে কিছুটা পরিবর্তন করে নিজেকে ট্যাটু মেশিন এর আবিষ্কারক বলে দাবি করার চেষ্টা করেন।

হতবাক এডিসন

আধুনিক ফ্লোরোস্কোপ উদ্ভাবন করতে গিয়ে এক্স-রে ব্যবহার করেন টমাস। এই ফ্লোরোস্কোপ হাসপাতালে ব্যবহৃত হতো। সেই সময় এক্স-রেকে অনিরাপদ ভাবা হতো না। এডিসন তার সহযোগী ক্ল্যারেন্স ড্যালিকে একটি ফ্লোরোস্কোপ তৈরীর নির্দেশ দেন। ড্যালি নিজের হাতের উপর এক্স-রে পরীক্ষা করেন। এতে করে তার হাতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হাত নিয়ে অনেক ভোগান্তির পর মারা যান ড্যালি। ড্যালির মৃত্যু তাঁকে হতবাক করে দেয়। তিনি এক্স–রে নিয়ে আর গবেষণা না করার সিদ্ধান্ত নেন। :(

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হাতি

১শ’টি পাওয়ার স্টেশনের মাধ্যমে এডিসন আমেরিকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেন। এসি তড়িৎ প্রবাহের চেয়ে ডিসি তড়িৎ প্রবাহকে বেশি সমর্থন করতেন। ঘটনাক্রমে সে সময় সারকাসের একটি হাতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এতে কিছু মানুষ মারা যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে সারকাস কর্তৃপক্ষ হাতিটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এডিসন এরকম নৃসংশতার বিরুদ্ধে থাকলেও তিনি এই সুযোগটিকে কাজে লাগান। তিনি ৬ হাজার ভোল্ট এসি তড়িৎ ব্যবহার করে হাতিটিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করেন এবং দেখান যে, ডিসি-তড়িৎ এসি-তড়িতের চেয়ে নিরাপদ।
অনেক তো জানলেন এডিসনের জীবন কাহিনী। এবার বিদায়ের পালা এসে গেল। টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে অন্য কোন বিষয় নিয়ে।
 

আপাতত ফেসবুক খোলার ভাবনা নেই সরকারের। অপেক্ষার প্রহর হয়ত কিছুটা বাড়ল আরও।

আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন।
তবে যে নিউজটা আপনাদের সাথে সেয়ার করতে যাচ্ছিযাচ্ছি তা দেখে আমি নিজেই বেশি ভালো নেই।
আপনারা জানেনন যে বাংলাদেশে সোজা রাস্তায় ফেসবুক বন্ধ আছে। (ভিপিএন এ সমস্যা নেই)।
আমরা বিভিন্ন নিউজে ফেসবুক খোলার সম্ভাবনাময় কিছু দিক হয়ত খুজে পেয়েছিলাম তবে প্রথম আলোর  
সংবাদটা দেখার পরসে আশার আলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। নিউজটাতে আমি অনেকটা আশাহত হয়েছি তাই
আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে’ ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করে সরকার এ লক্ষ্যে সফল হয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকেরা। তবে সরকার এখন নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও বড় পরিসরে চিন্তা করছে। ফলে শিগগির ফেসবুক খোলার কোনো আশ্বাস তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তাঁরা বলছেন, নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক ফল আসবে বলে তাঁদের ধারণা।
নিরাপত্তার দিক থেকে সফল হলে কবে খোলা হচ্ছে এসব মাধ্যম—এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসব মাধ্যম বন্ধ থাকার কারণে অনেকের, বিশেষ করে আমাদের মেধাবী তরুণদের সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই শিগগিরই সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এসব মাধ্যম খুলে দেওয়া হবে।’
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ১৯ দিন ধরে ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ থাকা অবস্থায় এসব অপরাধের মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন এবং দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সে উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় গত রোববার ফেসবুকের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রী।
ওই বৈঠকে ফেসবুকের পক্ষে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ম্যানেজার দীপালি লিবারহেন এবং আইনসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বিক্রম লাংঘে। সরকারের পক্ষে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের নানা ধরনের অপব্যবহারসহ নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় ফেসবুকের প্রতিনিধিদের কাছে। বৈঠক সূত্র বলছে, সব ধরনের টিউন আগে থেকে তদারকির জন্য বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাডমিন চেয়ে এখানে আলাদা একটি সার্ভার স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেকোনো বিষয়ে সরকারের অনুরোধে দ্রুত সাড়াও চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তাঁরা বিষয়টি ভেবে দেখার কথা জানিয়ে বলেছেন, ফিরে গিয়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সেটা অবশ্যই দু-এক দিনের মধ্যে সম্ভব হবে না।
সরকারের নানা মহলের এমন বক্তব্য হতে ধারনা করা যায় যে অতি দ্রুতই খুলছেনা ফেসবুক। হয়তো এর জন্য
আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সবাই ভালো থাকবেন ও অপরকেও ভালো রাখবেন। ধন্যবাদ।

একটি ওয়েবসাইট হোক আপনার সারা জীবনের স্থায়ী উপার্জনের উৎস

কিভাবে ওয়েবসাইট থেকে আয় করবেন তার কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

 বিজ্ঞাপন থেকে আয়ঃ আপনার ওয়েবসাইটে যদি অনেক  ট্রাফিক থাকে তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অন্যান্য কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করিয়ে সেখান থেকে আয় করতে পারেন।
যেমন- আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকলে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পন্যের বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। এই জাতীয় বিজ্ঞাপন গুলো ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করানোর মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটে যে কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাবেন সেই কোম্পানী আপনাকে একটি নির্দিষ্ট মূল্য পে করবে তাদের বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করানোর জন্য।


 নিজের কোন পন্য বিক্রি করে আয়ঃ আপনার ওয়েবসাইট যদি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রতিদিন বেশ ভাল ট্রাফিক থাকে তাহলে আপনি আপনার নিজের তৈরি করা কোন পন্যের বিজ্ঞাপন সেখানে দিতে পারেন এবং সেখান থেকে আপনি আপনার পন্যের জন্য বেশ ভাল সেল পেতে পারেন। তবে এটা শুধুমাত্র, যদি আপনার তৈরি করা কোন প্রোডাক্ট থাকে তাহলেই সম্ভব। আপনার যদি বিক্রি করার মত কোন পণ্য না থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।


ইমেইল কালেকশনঃ আমরা সবাই মোটামুটি কম বেশি নেট থেকে বই, গান, ভিডিও ইত্যাদি ডাউনলোড করে থাকি। তবে, মাঝে মাঝে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে বই বা মুভি ডাউনলোড করতে গেলে আমরা দেখে থাকি আমাদের ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে বলে। আমরা ইমেইল অ্যাড্রেস দিলে তারপর আমাদেরকে সেটা ডাউনলোড করতে দেয়।  কিন্তু কেন এমনটা হয়, কেন ইমেইল এর ঠিকানা চায় ওই ডাউনলোড সাইট গুলো? এটা হচ্ছে এই জন্য যে, আপনি গান ডাউনলোড করার সময় আপনার যে ইমেইল এড্রেসটি দিবেন সেটি ওই ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ সংরক্ষন করে রাখবে। এই ভাবে যতজন ওই গানটি ডাউনলোড করতে তত জনের ইমেইল অ্যাড্রেস তার কাছে থাকবে।

এই ভাবে ধরলাম, ১০০০ জনের ইমেইল ওই ওয়েবসাইটের মালিকের কাছে জমা হল। এবার তিনি ওই ১০০০ ইমেইল অ্যাড্রেস বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটারদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। কারন, অধিকাংশ ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য অ্যাক্টিভ ইমেইল অ্যাড্রেস এর তালিকা প্রয়োজন পরে। এই জন্য বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটাররা ইমেইল অ্যাড্রেস কিনে নেয় নিজেদের মার্কেটিং করার জন্য। আর আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে এবং আপনি এইভাবে ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে আপনিও এই ইমেইল অ্যাড্রেস গুলো বিক্রি করে আয় করতে পারেন।