শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

বিশ্বে মোবাইলে সাইবার ঝুঁকিতে শীর্ষে আছে বাংলাদেশও

বিশ্বের ২১৩ দেশে সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ক্যাসপারস্কির ২০১৫ সালের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত ল্যাব রিপোর্ট ‘আইটি থ্রেট ইভোলিউশন ইন কিউ থ্রি টু থাউজেন্ড ফিফটিন’ অনুযায়ী মোবাইলে সাইবার ঝুঁকিতে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ (প্রতি ৪টি ডিভাইসের অন্তত ১টি এখানে ভাইরাসাক্রান্ত)।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২১৩টি দেশের মধ্যে কম্পিউটারে ভাইরাসের আক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম। আর এসব ভাইরাসের ৬৪.৪৪ শতাংশই স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ভাইরাস।
সে হিসেবে আঞ্চলিক ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকেও সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সময়ের সিকিউরিটি থ্রেটের বেশিরভাগই মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক আর মোবাইল মেলওয়্যারের সবচেয়ে বেশি হার নিয়ে প্রথম সাইবার ঝুঁকির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে ক্যাসপারস্কি ল্যাবের মেলওয়্যার-বিশেষজ্ঞ টিম আর্মস্ট্রং বলেন, মোবাইল ফোনে মেলওয়্যার ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে হ্যাকাররা। তিনি বলেন, গত বছরের (২০১৪) তুলনায় এ বছর (২০১৫) মোবাইল ফোনে মেলওয়্যার ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ (ডিসেম্বর ২০১৫) প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার।
এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৩ হাজার। বাংলাদেশে বড় একটি অংশ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে বিশ্বের সাইবার ক্রিমিনালরা বাংলাদেশের প্রতি বেশি নজর দিচ্ছে। এদিকে থ্রিজির মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ব্রাউজিং সেবা পাওয়া ও স্মার্টফোনের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসায় সাধারণ মানুষ ভুলে মোবাইল মেলওয়্যারে আক্রান্ত হচ্ছে।
মূলত মোবাইল কনটেন্টে সংযুক্ত ভাইরাসই মোবাইল মেলওয়্যার। সাধারণত মোবাইল থেকে কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় ‘নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন, সিস্টেম স্লো বা এ ধরনের সতর্কবার্তা প্রদর্শন, কোনো গান বা ভিডিও খুঁজতে গেলে ভিন্ন ফরম্যাটের ফাইল দেখানো বা তা নিজ থেকে ডাউনলোড হতে শুরু হওয়া ইত্যাদি মোবাইল মেলওয়্যারের কারণেই হয়ে থাকে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত হ্যান্ডসেটের অবস্থা স্প্যাম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কম্পিউটারের মতোই হচ্ছে। বাজারে যেসব অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তা বর্তমানে প্রেরিত স্প্যামগুলোর ভাইরাস থেকে হ্যান্ডসেটকে মুক্ত রাখতে ততোটা সক্ষম নয় বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ইনফরমেশন সিকিউরিটি সেন্টার (জিটিআইএসসি) থেকে প্রকাশিত বার্ষিক উত্থানশীল সাইবার হুমকি শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, যত বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন, তত বেশি অ্যাপ্লিকেশনই আর্থিক লেনদেন ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হতে থাকবে, যার মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পাবে আরও বেশি। মোবাইলে অ্যাড সংক্রান্ত মেলওয়্যারের বাইরেও অনেকভাবে ভাইরাস ছড়ানো হচ্ছে।প্রথমদিকে কম্পিউটার ভাইরাসের মতোই এক্সিকিউটেবল ফাইলরূপে স্প্যামগুলো আসত যার কারণে সে স্প্যামগুলো শনাক্ত ও ব্লক করা খুবই সহজ ছিল।
কিন্তু বর্তমানে এ ঝুঁকিপূর্ণ স্প্যাম বা মেলওয়্যারগুলো আসছে এমপি থ্রি ফাইল, পিকচার বা এ জাতীয় মিডিয়া ফাইলের ছদ্মবেশে, যার কারণে ব্যবহারকারীর জন্য কোনটি স্প্যাম আর কোনটি স্প্যাম নয়, তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মেলওয়্যার ট্র্যাক করা ও নিরাপত্তার জন্য সফটওয়্যার তৈরি ও সরবরাহ করা একটি কোম্পানি অ্যাডাপটিভ মোবাইলের কর্মকর্তা কনি জানান, অ্যাডাপটিভ মোবাইল একটি বিশেষ ভাইরাস চিহ্নিত করেছে যার নাম বিসেলো। এটি দু’ভাবে ছড়াতে পারে।
প্রথমত এটি এমএমএসের ছদ্মবেশে আক্রমণ করতে পারে। কিংবা ফোনের ব্লুটুথ ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্চ করলে তখন এটি মোবাইলে প্রবেশ করতে পারে। অ্যাডাপটিভ মোবাইল এ ভাইরাসটিকে বলছে এয়ারবোর্ন ভাইরাস বা বাতাসবাহী ভাইরাস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন